১৫ই শা’বান যে কারণে ফযিলত মণ্ডিত

আমরা এটা জানি যে, পৃথিবীতে কোন কিছুই কার্যকারণ ব্যতীত সংঘটিত হয় নাতাই ১৫ই শা’বান ফযিলত মণ্ডিত হওয়ার পেছোনেও নিহিত রয়েছে উপযুক্ত কার্যকারণআর তা হচ্ছে আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালার সর্বশেষ হুজ্জাত, নবী (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বংশধারার নবম সন্তান ইমাম মাহদী (আ. তা. ফা.শা.)*-এর শুভ জন্মরাত যিনি শেষ যমানায় আবির্ভূত হয়ে বিশ্বকে সমস্ত প্রকার অন্যায়-অত্যাচার, নীপিড়ন-নির্যাতন ও যালিমের যুলুম থেকে রক্ষা করে ন্যায়ের মানদন্ডের আওতায় নিয়ে আসবেন এবং খোদায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। তখন এ পৃথিবীতে থাকবে না কোন প্রকার যুলুম-অত্যাচার, থাকবে না কোন ভেদাভেদ, বাঘ ও ছাগল একই তীরে এক সঙ্গে পানি পান করবে। তখন না বাঘ ছাগলের উপর হামলা করবে আর না ছাগল বাঘকে ভয় পাবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে সে দিন দেখে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। এ রাত ফযিলত মণ্ডিত হবার প্রকৃত কারণ আমারা জানতে পারলাম। পবিত্র মা’সুমিন (আ.)-গণও এ রাত ফযিলত মণ্ডিত হবার প্রকৃত কারণ এই পবিত্র ব্যক্তিত্বের জন্ম গ্রহণের কারণকেই উল্লেখ করেছেন। যা আমরা সাইয়্যেদ বিন তাউউসের কিতাবে লক্ষ্য করে থাকি। তিনি স্বীয় কিতাবে বলছেন: যেহেতু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এত বড় ও সর্বাধিক উত্তম কল্যান বা অনুগ্রহ দান করেছেন সেহেতু প্রতিটি মানুষের উচিৎ সেই মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করা এবং শরীরের সর্বশেষ শক্তি দিয়ে এই সর্বোত্তম এলাহী নেয়া’মতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। * আ. তা. ফা. শা. = আজ্জালাল্লাহু তা’য়ালা ফারাজাহুশ্ শারীফ। দেখুন: ইবনে তাউউস, আলী বিন মুসা, ইকবালুল আ’মাল, পৃ.-২০৭ থেকে ২৩৭ পর্যন্ত, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুল আয়া’লামি লিল মাতবুআ’ত, ১৪১৭ হিজরী। আল্ মাজলিসি, মুহাম্মদ বাকির, বিহরুল আনওয়ার, খণ্ড-৯৪, পৃ.-৮৫, হা.-৫, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুল ওয়াফা, ১৪০৩ হিজরী। আমরা ১৫ই শা’বানের আমলে লিপিবদ্ধ একটি দোয়ায় পড়ে থাকি যে,

((اللهم بحق ليلتنا هذه و مولودها و حجتك و موعودها التى قرنت الى فضلها فضلا فتمت كلمتك صدقا و عدلا لا مبدل لكلماتك ...))

হে আল্লাহ্! তোমাকে এ রাতের ও এ রাতে জন্মগ্রহণকারীর উছিলা দিয়ে ডাকছি এবং তোমার সত্য ও প্রতিশ্রুত হুজ্জাতের উছিলা ধরছি যে, যার কারণে ফযিলতের উপর ফযিলত দিয়েছো। আর তোমার সত্য ও ন্যায়ের বাণী পরিপূর্ণতায় পৌছেছে এবং তোমার বাণীর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার ক্ষমতা করো নেই। দেখুন: ইবনে তাউউস, আলী বিন মুসা, ইকবালুল আ’মাল, পৃ.-২১৯, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুল আয়া’লামি লিল মাতবুআ’ত, ১৪১৭ হিজরী। ইমাম মাহদী (আ.তা. ফা. শা.) যে ২৫৫ হিজরীর ১৫ই শা’বনে জন্মগ্রহণ করেছেন তার প্রমাণ শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের অনেক রেওয়ায়েতেই পাওয়া যায় এবং উক্ত হাদীসসমূহে এ বিষয়টিও পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, এ রাতে তাঁর জন্মগ্রহণই হচ্ছে এ রাতের ফযিলতের কারণ। দেখুন: আল্ কুলাইনী, মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব, আল্ কাফী, খণ্ড-১, পৃ.-৫১৪, তেহরান প্রিন্ট, প্রকাশক: দারুল কুতুবিল ইসলামিইয়্যা, সন ১৩৬৫ ফার্সি। আছ্ ছাদুক, মুহাম্মদ বিন আলী ইবনুল হুসাইন, কামালু্দ্দিন ওয়া তামামুন্ নেয়া’মাত, খণ্ড-২, পৃ.-৪৩২, তেহরান প্রিন্ট, প্রকাশক: দারুল কুতুবিল ইসলামিইয়্যা, সন ১৩৯৫ ফার্সি। সাবরাবি, আব্দুল্লাহ্ বিন মুহাম্মদ, আল্ ইত্তাহাফু বিহুব্বিল আশরাফ, পৃ.-১৭৯। ইবনে ছাব্বাগুল মালিকি, নুরুদ্দিন আলী বিন মুহাম্মদ, আল্ ফুছুলুল মুহিম্মাতু ফি মায়া’রিফাতিল আইম্মাহ্, পৃ.-৩১০। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এ রাতকে উপলব্দি করার তৌফিক আমাদের সকলকে দান করুন। হয়তো আপনারা ইমাম মাহদী (আ. তা. ফা. শা.)-এর ভুমিষ্ট হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন কথা শুনে থাকবেন, যেমন; ইসলামের কোন মাযহাব বলে থাকে তিনি ভুমিষ্ট হয়েছেন আবার কোন মাযহাব বলে থাকে তিনি শেষ যমানায় ভুমিষ্ট হবেন। তবে এ লেখায় যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে বিষয়টির প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটনের চেষ্টা করেছি পববর্তি আলোচনাটি লক্ষ্য করুন। www.bangla.irib.ir