কোরান-অনলি ভণ্ডরা অমুসলিম

গত কয়েকদিন আগে ‘ভণ্ডের ধর্ম –কোরান অনলি’ নামে একটি লেখা প্রকাশ করি এবং তাতে কোরান-অনলি অসার কথাবার্তার বিভিন্ন দিক উল্লেখ করি। এর দুই-তিন দিন পরে মহিউদ্দিন সাহেব ‘কোরান অনলি –কেন সম্ভব নয়, (১ম পর্ব) নামে একটি তথ্যবহুল লেখা প্রকাশ করেন।  সেখানে তাথ্যিক উৎসসহ একটি জরুরি ধর্মীয় অভিমত বা ফতোয়া প্রকাশ পায়। তাতে দেখানো হয় যে কোরান-অনলিরা মুসলমান নয়। আযহারী শিয়া-সুন্নি উলামাদের অভিমত দেয়া হয় এবং ড: ইউসুফ আলবাদরির অভিমতও আনা হয়। এবারে কোরান-অনলি ভণ্ডদের আচরণ ও কর্মপদ্ধতির উপর কিছু হাল্কা আলোচনা করতে যাচ্ছি। এই আলোচনা নাম্বারিংসহ নিম্নরূপ: (১) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরানে মুহাম্মদের (সা.) আনুগত্যের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কোরান-অনলিরা মুহাম্মদের (সা.) আনুগত্যকে শিরক মনে করে এবং তারা তাদের প্রতারণামূলক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে 'মুশরিক' আখ্যায়িত করে। যে আনুগত্যের নির্দেশ আল্লাহ কোরান পাকে ঘোষণা দিলেন তারই কারণে মুসলমানদের উপর শিরকের মিথ্যা অভিযোগ তোলা সাক্ষাৎ কুফরি। ফতোয়ার কথা আগেই উল্লেখ করেছি। (২) কোরান-অনলিরা একটি প্রতারক দল যারা হাদিস অস্বীকার করে, মুহাম্মদের (সা.) প্রয়োজন দেখে না, কোরানের ব্যাখ্যা (তফসীর) মিথ্যা মনে করে (অথচ তারা নিজেরাই ‘তফসীর’ করে!), ইতিহাস মিথ্যা মনে করে, নবী-সাহাবিদের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা বর্জন করে, অধিকন্তু কোরান পরিবর্তন হয়েছে বলে বিশ্বাস করে, কিন্তু কোরানের যে অংশ নিয়ে তারা কথা বলে সেই অংশ কীভাবে অপরিপরিবর্তীত থেকে গেল, সেই প্রমাণাদি দিতে ব্যর্থ হয়। তাদের এই অবস্থান থেকেই তারা কোরান নিয়ে ধান্ধাবাজী করে। বানর যেভাবে এক ডাল থেকে আরেক ডালে লম্ফ-ঝম্প দেয়, সেভাবে এক আয়াতে আটকা পড়ে অন্য আয়াতে বিচরণ করে, লক্ষ্যহীনভাবে ডালে ডালে ঘুরে। (৩) কোরানের আদেশ-নিষেধ ও বাণী কোরানের গোটা পরিধিতে বিস্তৃত। এই সুযোগে তারা কোরানের আয়াত নিয়ে খেলা করে যেহেতু সর্বসাধারণ এসবের উপর ওয়াকিফহাল নন। যে কয়টি আয়াত কোন উপায়ে তাদের সাথে খাপ খেয়ে যায়, সেই আয়াতগুলোকে বার বার উদ্ধৃতি দিয়ে যায় এবং যেগুলো তাদের সাথে খাপ খায় না, সেগুলোর মুখোমুখি হয় না। কেননা এতে ভণ্ডামির সমাপ্তি ঘটে। উদাহরণ: আল্লাহ রাসুলকে পাঠিয়েছেন মানুষের কাছে তাঁর বাণী ‘পৌঁছে’ দেয়ার জন্য, মানুষকে ‘শুদ্ধ’ করার জন্য, তাদেরকে কিতাব ‘শিক্ষা’ দেয়ার জন্য, এবং তাঁর বাণী ‘বুঝিয়ে’দেয়ার জন্য, (‘’-কমার ভিতরে যেসব শব্দ আছে সেগুলোর উল্লেখ কোরানে আছে। এই ধরণের অনেক কথা কোরানে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু ‘কোরান-অনলি’ ফেরিওয়ালাগণ বাকি আয়াতগুলো চাপিয়ে গিয়ে কেবল “বাণী পৌঁছানোর” আয়াতের কথা চতুর্দিকে ‘ফেরি’ করে বেড়ায়। বুঝাতে চায় মুহাম্মদের (সা.) দায়িত্ব ছিল ‘নিছক’ পৌঁছে দেয়া! ব্যাপারটা যেন কলাগাছের মত। কলা-ছড়ি ধরার পর, কলাগাছ শেষ! মুরতাদগণ এভাবে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এটা শয়তানের কাজ। কোরানে শয়তান সম্পর্কিত সব আয়াত তাদের ব্যাপারে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। (৪) তবে একটা পজিটিভ দিক হল এই যে এই অভিশপ্ত প্রতারকরা নিজেদের কথা-বার্তা এমনভাবে সাজিয়ে নিয়েছে যে তারা এখন নিজেদের কথার-ফাঁদেই আবদ্ধ। অনেক কথা অনেকবার উল্টো-পাল্টা করেছে। কখনো এটা স্বীকার করেছে, ওঠা মেনেছে, আবার পরে যেটা মেনেছে, সেটাই অস্বীকার করেছে। কখনো মুহাম্মদকে সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং বলেছে মুহাম্মদ কেবল আরব জাতির রাসূল, তাদের জন্য চাই ‘বাংলাভাষী’ রাসূল। কিন্তু পাঠকেরা যখন তাদের নাকে-মুখে লাথি দিয়েছে, নাকামি-চোবানি খাইয়েছে, তখন প্রতারণা অন্যভাবে সাজিয়েছে। তখন শাব্দিক আকারে আরবি রাসূলকে ‘মানার’ একটা অজুহাত বের করেছে। বাক্য ও শব্দের প্যাচ-পাচে দেখাতে চেয়েছে তারাও মুহাম্মদকে (সা.) মেনেছে,  কিন্তু খানিক পরেই তাদের মিথ্যাচারে ধরা পড়ে গিয়েছে। একটি নিকৃষ্ট প্রথার কুযুক্তিতেই তাদের উদাহরণ হয় এভাবে: একটি নিকৃষ্ট লোক তার মেয়ের সাথে কুকর্ম করত। (ইউরোপে এমন কুকাজ বিরল ক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিতে হয়)।. কুকর্মীর syllogised যুক্তি এই, ‘নিজ মেয়ের সাথে এই কাজ করা যাবে না। এ কথা সত্য। কিন্তু নারীদের সাথে করা যাবে। নিজ মেয়েও নারী, তাই তার সাথেও এই কাজ করা যাবে।’ এই যুক্তি হচ্ছে  শয়তানী যুক্তি। কোরান অনলি মুরতাদরা মুহাম্মদকে (সা.) প্রথমে অস্বীকার করার পর তাদের নাকে-মুখে থু থু ফেলা হলে তারা সেই শয়তানী syllogism এর আশ্রয় নেয়। তারা বলে, কোরানকে মানার জন্য মুহাম্মদের আনুগত্যের প্রয়োজন। এটা সত্য। কিন্তু মুহাম্মদ যেহেতু কোরানের আনুগত্য করেছেন, সুতরাং, কোরানই যথেষ্ট, মুহাম্মদের আনুগত্যের দরকার নাই।’ এরা শয়তান! (৫) কোরান অনলিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে। এই সমস্যা সেদিনের কাফেরদের যেমন ছিল আজকের কাফেরদেরও তেমনি। মুহাম্মদ (সা.) বিদ্বেষী সবগুলো কাফেরের একই উদ্দেশ্য। তাঁর কথা, তাঁর বাণী, তাঁর শিক্ষা ও তাঁর জীবনের হেদায়েতকে ধ্বংস করে দেয়া। খারেজীদের বিভিন্ন আন্দোলনও এই নবীর বাণীকে জাল করার প্রয়াস পেয়েছিল। কিন্তু ওরা ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহ এটা হতে দেননি। আল্লাহ মুহাম্মদের (সা.) এর মাধ্যমে তাঁর বাণীকে ‘বুঝিয়ে’ দিয়েছেন, তাঁর মাধ্যমে ‘শিক্ষা’ দিয়েছেন এবং যাদেরকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন ওরা হচ্ছেন তাঁর  সাহাবী, তাঁর শিষ্য এবং তাঁদের পরম্পরায়, সেই বাণী, সেই শিক্ষা হেফাজত করেছেন। আজকের মুহাম্মদ (সা.) বিদ্বেষী আর কালকের মুহাম্মদ (সা.)  বিদ্বেষী-শত্রুদের মধ্যে কোন ফারাক নেই, কোন তফাৎ নেই। কাফিরেরা মুহাম্মদ (সা.) কে অস্বীকার করার এবং বিদ্বেষ পোষণ করার ক্ষেত্রে যেসব আয়াত কোরানে এসেছে এর সবগুলো আয়াত কোরান-অনলি মুরতাদদের ব্যাপারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। (৬) কোরান-অনলি মুরতাদগণ রাসূলকে বর্জন করতে গিয়ে, সাহাবিদেরকে বর্জন করতে গিয়ে, হাদিস বর্জন করতে গিয়ে এক চরম ‘এলোমেলো’ অবস্থায় পড়তে হয়েছে। তারা কোরানের স্থান ও কাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই আজ এই ব্যাখ্যা কাল সেই ব্যাখ্যা নিয়ে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। সুতরাং তারা নিজেদের সৃষ্ট অন্ধকারেই নিমজ্জিত থাকতে হবে। (৭) আল্লাহ যখন কারো উপর অহী নাজিল করেন, তখন সেই ব্যক্তি কোনো সমাজের একজন লোক হন। অহী কার উপর নাজিল হল, কোন সমাজে নাজিল হল, কোন কালে নাজিল হল –এগুলো না জেনে কোন একটি বই হাতে নিয়ে বলা যাবে না 'এটাই আল্লাহ বই’।. এভাবে বই পড়া হয় না। বইয়ের  সুনির্দিষ্ট স্থান-কাল থাকে, কথার নির্দিষ্টতা থাকে। তারপর বই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ হয় –সকল বই এবং সকল বাণী। একটা বই হাতে নিয়ে আপনার যা ইচ্ছা তাই বলতে গেলে সেই বলা হবে আপনার বলা, আপনার খামখেয়ালি কথা, আপনার জল্পনা কল্পনার বহিঃপ্রকাশ, আপনার ‘উপন্যাস’।. কোরান অনলিরা কোরান নিয়ে যা বলে তা তাদের উপন্যাস, তাদের খামখেয়ালি ‘তফসীর’। (৮) কোরানকে বুঝতে হলে যার উপর আল্লাহ কোরান নাজিল হয়েছিল তাকে বুঝতে হবে, তিনি কিভাবে (অর্থাৎ কোন পদ্ধতিতে) মানুষকে শুদ্ধ করার কাজ করেছিলেন তা জানতে হবে, কাদেরকে (অর্থাৎ কোন লোকদেরকে) তিনি শুদ্ধ করেছিলেন, কাদেরকে ‘শিক্ষা’ দিয়েছিলেন, তা জানতে হবে। তার সমাজকে [অহীর প্রাথমিক উদ্দেশ্যস্থল] জানতে হবে, কীভাবে সেই সমাজের সাথে কোরানের আয়াত সম্পর্কিত হয়  -তা জানতে হবে। কিন্তু কোরান-অনলিদের সেই জানার কোন উপায় নাই, তারা আগেই হাদিস অস্বীকার করে বসেছে, মুহাম্মদের শিক্ষাপ্রাপ্ত সাহাবীদেরকে (রা.) অস্বীকার করেছে, তাফসীরকে অস্বীকার করেছে, ইতিহাসকে অস্বীকার করেছে, এখন তাদের জানার কোন পথ নেই। এভাবেই আল্লাহ মুরতাদদের হেদায়েতের পথ রুধ করে দিয়েছেন। তাই তাদের পক্ষে ফাইজলামী ও কাল্পনিক কথা বলা ছাড়া উপায় নাই। তাই শয়তানী করতে এখন নিজেরাই ‘মুফাসসির’ সেজেছে, নিজেদের মূর্খতাকেই হেদায়েত ভাবছে। বলেছি, কোরান ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, তফসীর সাপেক্ষ, আরবির জ্ঞান সাপেক্ষ, ভাষিক convention সাপেক্ষ, অর্থগত ঐতিহাসিকতা সাপেক্ষ, সমাজ ও প্রথা নির্দেশক সুতরাং এসব অস্বীকার করে খামখেয়ালি পথ অবলম্বন ভ্রষ্টতা, গোমরাহি। আল্লাহ বলেন, أَرَأَيْتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلاً আপনি কি তার কথা বিবেচনা করেছেন যে তার নিজের খামখেয়ালি প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? আপনি কি এমন লোকের জিম্মাদার হতে পারেন? (২৫:৪৩) এরা মুশরিক। দর্শনমূর্খ, ধর্মমূর্খ, ইতিহাসমূর্খ, ভাষাতত্ত্বমূর্খ এই ফাজিলেরা কাফেরদের ন্যায় যুক্তিবাদী/বিজ্ঞানবাদী মুক্ত চিন্তক হতে গিয়ে মডার্নিষ্ট দর্শনের সম্মুখে ধরাশায়ী হয়ে ঈমান হারিয়েছে। এরা পথভ্রষ্ট। ফাসিক। (৯) মানুষ ও তাদের সমাজের কথা-বার্তায়, আচার-আচরণে, সমঝে, স্মৃতিতে পার্থক্যের স্থান থাকে, ভিন্নতা থাকে। পার্থক্য ও ভিন্নতা আছে বলেই কি সব ইতিহাস, সব বিবরণ, সব ঘটনা প্রবাহ, সব শিক্ষা ‘মিথ্যা’ হয়ে যায়? এই মাত্র ৪১ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে। এই রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন, খবরের কাগজ, ক্যামেরার ছবি  এতকিছুর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমরা সেই যুদ্ধের বিভিন্ন বিবরণে ভিন্নতা পাচ্ছি, একই বিষয়ের বিভিন্ন মৌখিক বিবরণও পাচ্ছি। ভিন্নতা সব যুদ্ধের ক্ষেত্রে, সব ঐতিহাসিক বিবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা স্কীল্ড ঐতিহাসিক তাদের কাছে এগুলো তেমন সমস্যার কিছু নয়, কেননা তাদের আপন বিদ্যায় ইতিহাস দর্শন, মনস্তত্ত্ব, স্মৃতি, আদর্শ, ভাষা ইত্যাদি কীভাবে কাজ করে যায় সে বিষযয়ে তারা জ্ঞাত। কিন্তু ইতিহাসমূর্খ কোনো ব্যক্তি যদি বিবরণাদির ভিন্নতা দেখিয়ে গোটা ইতিহাসকে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে ও তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চায়, তবে এমন নাদান ব্যক্তিকে হয় কানমলা দিতে হবে, আর না হয় তাকে (ignore) করতে হবে। কোরান অনলিরা এই পর্যায়ের মূর্খ। কোরানের কোন বিদ্যায়ই তাদের জ্ঞানে নেই। কিন্তু বেহায়ার মত কোরান থেকে উদ্ধৃতি দেয়। (১০) এরা ‘উদ্ধৃতি পাণ্ডা’।. কোরানের ধারণা, তার বাণী, তার অনেক কথার অনেক অর্থ বিভিন্ন আয়াতে গোটা কোরান জোড়ে ছড়িয়ে আছে। যেহেতু সামাজিক, নৈতিক, আইনি অনেক বিষয় সুদীর্ঘ নব্যুয়তী-কাল ব্যাপী নাজিল হয়েছে তাই একটি বিষয়ের বিভিন্ন দিক অনেক আয়াতে ছড়িয়েছে। কোরান  বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়া আয়াতের সমাহার নয়, (not a book of collected quotations from disarrayed origins).  কোরান প্রেক্ষাপট ভিত্তিতে নাজিল হয়েছিল এবং নবী (সা.) যাদেরকে ‘শিক্ষা’ দিয়েছিলেন, যাদেরকে সেই বাণীসমূহ ‘বুঝিয়ে’ দিয়েছিলেন, তারপর যারা বাণী ও শিক্ষাকে সংরক্ষণ করেছিলেন, এবং তাদের পরবর্তীদেরকে শিখিয়েছিলেন এবং এই পদ্ধতিতে যেভাবে সেই বাণী ও ব্যাখ্যাকে  সংরক্ষণ করেছেন, সেতাই হচ্ছে 'কোরান-নির্ঝর', কোরানের অর্থের স্থান, তার মূল সম্ভার। কোরানের ব্যাখ্যা সেই জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে হতে হবে। কোরানের আয়াতের ডিকশনারি দেখে কোন আয়াত উল্লেখ করলেই চলবে না, বরং সেই জ্ঞান ভাণ্ডারের আলোকে এর অর্থ নিরুপণ করার দরকার হবে। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে মতের ভিন্নতা থাকলে, সেই মত  সেই জ্ঞান-ভাণ্ডারের সাথে mitigate করে, তবেই কিছু বলতে হবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট অপরাপর আয়াত কী বলে, তাও সামনে রাখতে হবে। এসব কাজ করতে হলে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজন আছে বলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পথ সহজ হয়েছে। একজন নবীশের কাছে যেসব বিষয় সমস্যাবহুল, একজন উস্তাদের কাছে সেটা সমস্যা নয়, কেননা তিনি এই পর্যায় অতিক্রম করে ফেলেছেন, আজীবনের শিক্ষা তাকে অনেক দিগ্বিদিক দেখিয়েছে। কোরান-অনলিরা কোরানমূর্খ। ওরা নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন সম্বলিত কোন শব্দ দেখলেই দৌড় মেরে সেটার উদ্ধৃতি দেবে, উল্লেখিত নিয়ম পদ্ধতি বা বাদবাকি আয়াতের প্রেক্ষিতের ধার ধারবে না। কোরান-অনলিরা ‘উদ্ধৃতির পাণ্ডামী’ করে বেড়াচ্ছে। তারা জানে যে ইন্টানেরটে আরবি জানা, কোরানের উপর জ্ঞান রাখা, মাদ্রাসায় পড়ুয়া লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য তাই উদ্ধৃতির পাণ্ডামী করে, ভণ্ডধর্ম প্রচার করলে তা হয়ত অনেকে ঠাহর করতে পারবে না। এরা প্রতারক। শয়তান। (১১) মানব সমাজে এমনটি কখনো হয় না যে তার সব লোক রাতারাতি খারাপ হয়ে যায় বা উদ্দেশ্য বিমুখ হয়ে উলটো কাজ করতে শুরু করে। নবী মুহাম্মাদ (সা.) যেসব সাহাবাদেরকে নিয়ে ২৩ বৎসর ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করলেন এবং এই দীর্ঘ সময়ে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে ধনমাল উৎসর্গ করে এই নবীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন এবং তাঁর কাছ থেকে দুনিয়া আখেরাতের তা’লীম নিলেন, তাঁর কাছ থেকে কোরান শিখলেন, কোরানের ব্যাখ্যা শিখলেন, কোরান মুখস্থ করলেন, তাঁদের স্ত্রী-পুত্র, সন্তান-সন্তিনীরাও করলেন, তাঁদের কি হল? নবীর (সা.) মৃত্যুতে তাঁরা কি সেই শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়লেন (নায়ূযুবিল্লাহ)? কোরান অনলি অভিশপ্তরা কি বলছে? এই মুরতাদগণ মুহাম্মদের (সা.) আনুগত্য বিসর্জন করতে গিয়েই তাঁর সাহাবীদেরকে বর্জন করেছে। তাঁর সাহাবীদের কোন কথা শুনতেই চায় না। কিন্তু কথা হচ্ছে ভণ্ডরা কোরান পায় কীভাবে? তারা এই আলোচনায় নামতেই পারবে না। কারণ তাদের কোন পথ খোলা নয়। তারা আগেই ইতিহাস মিথ্যা বলেছে, হাদিস মিথ্যা বলেছে, তফসীর মিথ্যা বলেছে। এখন কোন উৎস দিয়ে সে কোরানের ঐতিহাসিকতার প্রমাণ করবে? কিছুই নেই। আল্লাহ তাদের পথ রুখে দিয়েছেন। আল্লাহ এভাবেই কাফেরদেরকে পথ দেখান না। তাই তারা লক্ষ্যবিচ্ছুত, নিরাশ। এই অবস্থায় কখনো বলবে আরবি রাসূল মানবে না, কেননা মুহাম্মদ (সা.) তাদের নবী হতে পারেন না, তিনি আরবি, তাঁর কোরান আরবদের জন্য। তাই তাদের চাই বাঙালী রাসূল। কিন্তু সেই রাসূল না পেয়ে তারা নিরাশ! পূনরায় প্রতারণা! আবার সেই আরবি রাসূলের উপর মিথ্যার রঙ চড়িয়ে নিজেদের ‘ব্যাখ্যাকে’ কোরান বানিয়ে  হয়েছে শয়তানের ফেরিওয়ালা। ওরা মিথ্যাবাদী, ভণ্ড। লিখেছেন এম আহমদ। http://www.shodalap.org/m_ahmed/14621/