আরবি লিপি
আরবি লিপি
0 Vote
228 View
আরবি লিপির উৎপত্তি আরামীয় লিপি থেকে। আরামীয় লিপি খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতক থেকেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু এতে ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা আরবি ভাষার তুলনায় ছিল কম। তাই একই আরামীয় বর্ণ আরবি ভাষার একাধিক বর্ণ নির্দেশে ব্যবহার করা হত। এই দ্ব্যর্থতা দূর করার জন্য ৭ম শতক থেকে বর্ণগুলির নীচে বা উপরে বিভিন্ন অতিরিক্ত চিহ্ন (diacritics) ব্যবহার করা শুরু হয়। এই চিহ্নগুলিই আরবিকে স্বতন্ত্র লিপি হিসেবে অন্যান্য লিপি থেকে পৃথক করেছে। এছাড়া পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ পঠন নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু চিহ্ন আরবি লিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে হ্রস্ব স্বরধবনি ও ব্যঞ্জনদ্বিত্ব নির্দেশকারী চিহ্নগুলি অন্যতম। ইসলামের প্রথম শতকে সংঘটিত এই সংস্কারগুলির পর আরবি লিপির যৎসামান্য সংস্কার হয়েছে। তাই চিরায়ত আরবি লিপি এবং আধুনিক আরবি লিপির মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য নেই। সুবিশাল আরব বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের আরবি ভাষায় বিস্তর ফারাক থাকলেও সর্বত্রই একই আরবি লিপি ব্যবহৃত হয়।
আরবি লিপি ডান থেকে বাম দিকে লেখা হয়। এবং লিপিটি পেঁচিয়ে এক বর্ণ আরেক বর্ণের সাথে সংযুক্ত করে লিখতে হয়। তবে আলিফ, দাল, যাল, র, য, এবং ওয়াও --- এই ছয়টি বর্ণ এককভাবে বসে। ফলে এই বর্ণবিশিষ্ট শব্দের ক্ষেত্রে ফাঁক দেখা যায়। এই ছয়টি বর্ণ ছাড়া বাকী সমস্ত বর্ণ চার রকমের রূপ ধারণ করতে পারে: আদ্য, মধ্য, অন্ত্য এবং বিচ্ছিন্ন। এই রূপগুলিতে অনেক সময় বর্ণটির মূল রূপের অনেক বৈশিষ্ট্য বাদ যায়। এছাড়া অনেক সময় একাধিক লিপির সমন্বয়ে যুক্তলিপি বা ligature-ও ব্যবহার করা হয়।
Calligraphy তথা হস্তলিপিশিল্প আরবি লিপিতে যেভাবে প্রযুক্ত হয়েছে, অন্যান্য ভাষার লিপিতে এমনটি দেখা যায় না। লিপির সৌষ্ঠব ও কারুকাজ সামগ্রিক আরবি শিল্পকলার অঙ্গাঙ্গীভূত একটি বিষয়।
আরবি লিপিতে ২৮টি বর্ণ আছে এবং এগুলির সবগুলিই ব্যঞ্জন নির্দেশ করে, যদিও আলিফ, ওয়াও ও ইয়া বর্ণ তিনটি দীর্ঘ স্বরধ্বনি নির্দেশেও ব্যবহৃত হয়। হ্রস্ব স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনদ্বিত্ব নির্দেশের জন্য আরবি (এবং অন্যান্য সেমিটীয় ভাষার লিপি যেমন হিব্রু ও আরামীয় লিপিতে) ব্যঞ্জনের উপরে ও নীচে বিভিন্ন চিহ্ন (ফাৎহ্বাহ্, কাস্রাহ্, দ্বাম্মাহ্, শাদ্দাহ্) ব্যবহার করা হয়। তবে এই চিহ্নগুলি কেবল কুরআন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ভাষাবৈজ্ঞানিক ও সাহিত্য গ্রন্থেই বেশি ব্যবহার করা হয়, যেখানে উচ্চারণ ভুলের পরিমাণ এড়ানো জরুরি। দৈনন্দিন সংবাদপত্র, সাধারণ বই, নথিপত্রে এই চিহ্নগুলি ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে। ফলে স্বরচিহ্নবিহীন শব্দগুলিতে কী স্বরচিহ্ন বসবে, এ নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে যায়। তাই সাধারণ আরবির পাঠকের অনেক আরবি অভিধানিক শব্দ জানা থাকতে হয়।