বাংলা ভাষা
বাংলা ভাষা
0 Vote
110 View
বাংলা দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বপ্রান্তের একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। বাংলা দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বে অবস্থিত বঙ্গ বা বাংলা নামক অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা। এ অঞ্চলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত। এছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও বাংলা ভাষাতে কথা বলে। প্রায় ৩৫০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা বিশ্বের বহুল প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে একটি (ভাষাভাষীর সংখ্যানুসারে এর অবস্থান চতুর্থ থেকে সপ্তমের মধ্যে)। বাংলা বাংলাদেশের প্রধান ভাষা; ভারতে বাংলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কথিত ভাষা । অসমীয়া ও বাংলা ভৌগলিকভাবে সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত ইন্দো-ইরানীয় ভাষা। ইতিহাস খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাদের শেষ প্রান্তে এসে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকে যে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলোর উদ্ভব ঘটে, তাদের মধ্যে বাংলা একটি । কোন কোন ভাষাবিদ তারও অনেক আগে, ৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, বাংলার জন্ম হয় বলে মত পোষণ করেন। তবে এ ভাষাটি তখন পর্যন্ত কোন সুস্থির রূপ ধারণ করেনি; সে সময় এর বিভিন্ন লিখিত ও ঔপভাষিক রূপ পাশাপাশি বিদ্যমান ছিল। যেমন, ধারণা করা হয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর দিকে মাগধি অপভ্রংশ থেকে মাগধি অবহট্ঠের উদ্ভব ঘটে। এই অবহট্ঠ ও বাংলা কিছু সময় ধরে সহাবস্থান করছিল। বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: 1. প্রাচীন বাংলা (৯০০/১০০০ খ্রিস্টাব্দ – ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ) — লিখিত নিদর্শনের মধ্যে আছে চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান; আমি, তুমি, ইত্যাদি সর্বনামের আবির্ভাব; ক্রিয়াবিভক্তি -ইলা, -ইবা, ইত্যাদি। ওড়িয়া ও অসমীয়া এই পর্বে বাংলা থেকে আলাদা হয়ে যায়। 2. মধ্য বাংলা (১৪০০–১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) — এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন; শব্দের শেষে “অ” ধ্বনির বিলোপ; যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন; ফার্সি প্রভাব। কোন কোন ভাষাবিদ এই যুগকে আদি ও অন্ত্য এই দুই ভাগে ভাগ করেন। 3. আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে) — ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপন (যেমন তাহার → তার; করিয়াছিল → করেছিল)। বাংলা ভাষা ঐতিহাসিকভাবে পালির সাথে বেশি সম্পর্কিত হলেও মধ্য বাংলায় (চৈতন্য যুগে) ও বাংলা সাহিত্যের আধুনিক রনেসঁসের সময় বাংলার ওপর সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ও মারাঠির শব্দভাণ্ডারে প্রচুর সংস্কৃত শব্দ রয়েছে; অন্যদিকে হিন্দি ও অন্যান্য ভাষাগুলো আরবি ও ফার্সি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য আন্দোলনকারীদের স্মরণে নির্মিত ঢাকা-র শহীদ মিনার ১৮শ শতকের পূর্বে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পর্তুগিজ মিশনারি পাদ্রি মানোএল দা আসসুম্পসাঁউ Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes নামে বাংলা ভাষার প্রথম অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন; ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত ভাওয়ালে কর্মরত অবস্থায় তিনি এটি লিখেছিলেন। ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালহেড নামের এক ইংরেজ প্রাচ্যবিদ বাংলার একটি আধুনিক ব্যাকরণ লেখেন, (A Grammar of the Bengal Language (১৭৭৮)) যেটি ছাপাখানার হরফ (type) ব্যবহার করে প্রকাশিত সর্বপ্রথম বাংলা গ্রন্থ। বাঙালিদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রথম ব্যাকরণ রচয়িতা; তাঁর গ্রন্থের নাম "Grammar of the Bengali Language" (১৮৩২)। এ সময়ে ক্রমশ সাধুভাষা থেকে সহজতর চলিতভাষার প্রচলন বাড়তে থাকে। ১৯৫১–৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে (এখনকার বাংলাদেশে) সংঘটিত "ভাষা আন্দোলনের" ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলাভাষী হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র উর্দু ভাষাকেই সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ভৌগোলিক বিস্তার
মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার ভৌগোলিক বিস্তার বাংলা দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বভাগের বঙ্গ বা বাংলা নামের অঞ্চলের লোকদের মাতৃভাষা। এ অঞ্চলটি বর্তমানে ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সমন্বয়ে গঠিত। বাংলাদেশের প্রায় ৯৮% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও পাশ্চাত্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাভাষী বাস করেন। সরকারি মর্যাদা বাংলা দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত রাষ্ট্রভাষা। এছাড়াও ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হল বাংলা এবং আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে স্বীকৃত সরকারি ভাষা হল বাংলা। এছাড়াও বাংলা ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান স্বীকৃত ভাষা।(সূত্র:উইকিপিডিয়া)