“অতএব, সেদিন দূরে নয় যেদিন আল্লাহ তায়ালা বিজয় ঘোষনা করবেন।”

আল-মায়ীদা;-রুকু ৮ আয়াত;-৫১-৫৬ কোঃ কথা-১০০ আমরা ১৪ নং আয়াতে পড়ে এসেছি, আল্লাহ বলেন, ‘আমি ইহুদী ও নাসারাদের মাঝে চিরস্থায়ী শত্রুতা সৃষ্টি করে দিয়েছি’। আর এ আয়াতে বলা হচ্ছে, তারা পরষ্পর বন্ধু। তফসীরকার গন বলেন। এ আয়াতটি ছিল আল্লাহর ভবিষ্যতের বাণী,যা বর্তমানে কার্য করি হচ্ছে। বর্তমানে তারা পরষ্পর জাগতীক দায় বদ্ধতা ও মিলিত ভাবে ইসলামকে দাবিয়ে রাখার মানষে বন্ধু হয়ে গেছে। ৫১/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ অর্থাৎ;-তোমরা ইহুদী ও নাসারাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করোনা। তারা একে অপরের অভিভাবক। তোমাদের মধ্যে যে তাদের অভিভাবক বানাবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। ইহুদী ও নাসারাদের অভিভাবক হিসেবে নিতে নিষেধ করা হয়েছে। এ আয়াতে অনেকে ‘আউলীয়া’ শব্দের অর্থ বন্ধু বলেছেন। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আরবীতে বন্ধুর আরও প্রতিশব্দ আছে, সে গুলোর বদলে আউলীয়া ব্যবহার করে আল্লাহ নিজেই সাধারণ বন্ধুহতে একে আলাদা করে দিয়েছেন। অভিভাবক হল এমন বন্ধু যিনি উপদেষ্টার কাজ করবেন। জাগতীক প্রয়োজনে তাদের সাথে সাধারণ বন্ধুত্ব করতে দোষ নেই। আরও বলা হয়েছে যারা তাদের উপদেষ্টা মানবে, তাদেরকে ওদেরই শামিল বলে মনে করা হবে। আল্লাহর এ আইনে প্রায় প্রতিটা মুসলীম দেশই এই দোষে দোষী হতে পারে। ৫২/فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَى أَن تُصِيبَنَا دَآئِرَةٌ فَعَسَى اللّهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُواْ عَلَى مَا أَسَرُّواْ فِي أَنْفُسِهِمْ نَادِمِينَ অর্থাৎ;-বস্তুতঃ যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদের আপনি দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে পাছে না আমরা কোন দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হই। অতএব সেদিন দূরে নয় যেদিন আল্লাহ তায়ালা বিজয় প্রকাশ করবেন। অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দেবেন। ফলে তারা গোপন মনোভাবের জন্য অনুতপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালার প্রতি যাদের ইমান দৃঢ় তারা শুধু মাত্র আল্লাহর উপরেই সর্বাবস্থায় আস্থা রাখে। কিন্তু যাদের এমনটি নয়, বরং হৃদয়ে মোনাফেকী ভাব রয়েগেছে, তারা ভবিষ্যত বিপদের আশংকায় ইহুদী নাসারা গনের সাথে সম্পৃক্ততা রাখতে আগ্রহী হয়।মুসলমানের বিজয়ে তারা অনুতপ্ত হবে ও কৃত কর্মের জন্য আফসোস করবে। ৫৩/وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُواْ أَهَـؤُلاء الَّذِينَ أَقْسَمُواْ بِاللّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُواْ خَاسِرِينَ অর্থাৎ;-ইমানদারেরা তখন বলবে, এরাইকি সে সব লোক! যারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলত যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি। তাদের কৃতকর্ম সমুহ বিফল হয়ে গেছে, তারা ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। ৫৪/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ يَخَافُونَ لَوْمَةَ لآئِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ অর্থাৎ;-হে মুমিনগন, তোমাদের মধ্য হতে যে স্বীয় দ্বীন হতে পিছু হঠবে, অচিরে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদের তিনি ভালবাসবেন এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, তারা মুসলমানদের প্রতি বিনম্র হবে, এবং কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, কোন তিরষ্কার কারীর তিরষ্কারে ভীত হবেনা। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহা জ্ঞানী। এ আয়াতে যদিও ‘ইয়ারতাদ্দা’ বলা হয়েছে, কিন্তু মুরতাদের কথা বলা হয়নি। এখানে এমন লোকদের কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেছে, কিন্তু বাহ্যিক কোন কারণে যদি তাদের প্রানে ভীতির সঞ্চার হয়, কিংবা আত্মীয় স্বজনের গঞ্জনা বা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়, থমকে দাঁড়ায় বা পিছপা হতে চায়, তাদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে। যদি এমন হয়, তবে আল্লাহ তাদের বাদ দিয়ে নতুন কোন দল বা জমাতকে সৃষ্টি করবেন, যাদের তিন জোড়া গুন থাকবে। তা হল, তারা আল্লাহকে ভালবাসবে ও আল্লাহও তাদের ভালবাসবে, তারা নিজেদের মধ্যে বা আপোষে বিনম্র হবে আর কাফেদের ব্যপারে তারা হবে কঠোর মনোভাবাপন্ন, তারা জিহাদ করে যাবে, কিন্তু আত্মীয় বা কারও প্ররোচনায় পিছপা হবেনা। সুরা ‘ফাতাহ’ এ এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আশিদ্দাউন আলাল কুফ্ফারে রুহামায়ূম বাইনাহুম’। যার যার নাজাতের প্রয়োজনেই তাকে কাজ করতে হব। আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে খুশী দান করবেন। যাকে খুশী প্রাচুর্য দেবেন। ৫৫/إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ অর্থাৎ;-নিশ্চয় তোমাদের অভিভাবক আল্লাহ ও তার রসুল এবং মুমিনবৃন্দ, যারা নামাজ কায়েম করে, বিনম্র ভাবে জাকাত আদায় করে। এ আয়াতে মুসলীমদের প্রকৃত অভিভাবকদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ হলেন প্রধান অভিভাবক, এর পর রসুল সঃ তার পর এমন মুমিন যারা নামাজ কায়েম করে এবং বিনম্র ভাবে জাকত আদায় করে। এই বিনম্র বা ‘রাকেউন’ বলে এমন এক দলকে বলা হয়েছে, যারা একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠার কাজে আত্ম নিয়োগ করেছেন। নিজের জীবিকা অর্জনের মত সময় নেই। আল্লাহর পথে খরচ করার একটি খাত হিসেবে আমরা তাদের কথা সুরা আলে ইমরাণে পড়ে এসেছি। দাতাকে বিনম্র হয়ে দিতে হবে। তারা গ্রহন করলেই দেওয়া স্বার্থক বলে মনে করতে হবে। তারা অন্যের মত করে চাইতে আসেনা কারণ এরা ভিক্ষুক নন। ৫৬/وَمَن يَتَوَلَّ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ فَإِنَّ حِزْبَ اللّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ অর্থাৎ;-আর যারা, আল্লাহ ও তার রসুল এবং মুমিনদের অভিভাবক মনোনিত করে, তারাই আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী। আল্লাহ ও রসুলের অভিভাবকত্ব শর্তহীন, মুমিনদের অভিভাবকত্ব শর্ত সাপেক্ষে। তারা অন্য মুমিনদের অভিভাবক হতে পারে। কেনা এরাই আল্লাহর মনোনিত দল, তারাই সফলকাম হবে। যেখানে মুমিনদের বেলায়ই শর্ত আরোপীত। সেখানে অমুসলীম, ইহুদী নাসারাগন কেমনকরে মুসলীমদের অভিভাবক হতে পারে! লিখেছেন আবদুস সামাদ http://www.shodalap.org/abdus-samad/14827/

সম্পর্কিত শিরোনাম