নাহজুল বালাগায়: জ্ঞান

আলী (আঃ) এর অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো তিনি ছিলেন অসীম জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান। রাসূলে খোদা (সা) বলেছেন,আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী হলো সেই শহরের দরোজা। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারায় সিক্ত হয়ে আছে নাহজুল বালাগা। নাহজুল বালাগা তাই পরিণত হয়েছে জ্ঞানের বিস্ময়কর এক সম্ভারে।

আমিরুল মুমেনিন আলী (আঃ) এর বক্তব্য-চিঠিপত্র এবং তাঁর বিভিন্ন বাণীতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো ইসলাম হলো একটি জীবন বিধান এবং ইসলাম আমাদেরকে মর্যাদাময় ও সম্মানজনক একটি জীবনের দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। আলী (আঃ) তাই সবসময়ই এ বিষয়টিকে জনগণের সামনে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন মানুষের মনন থেকে অজ্ঞতার পর্দাগুলোকে সরিয়ে দিতে এবং মানুষের দৃষ্টিকে আলোর একটি উৎস হিসেবে,হেদায়েতের উপাদান হিসেবে জ্ঞানের প্রতি নিবদ্ধ করতে। কুমাইল নামে তাঁর একজন সঙ্গীকে তিনি বলেছেনঃ হে কুমাইল! জ্ঞান হলো ধন-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কারণ জ্ঞান হলো তোমার পাহারাদার,আর তোমার উচিত মালের পাহারাদার হওয়া। মাল থেকে দান করার ফলে মালামাল হ্রাস পায় কিন্তু জ্ঞান দান করার ফলে জ্ঞান আরো বৃদ্ধি পায়। তাই যে সম্মান বা মর্যাদা মালের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে,মাল চলে গেলে সেই সম্মান ও মর্যাদাও হারিয়ে যাবে।

ইসলাম হলো একটা মৌলিক ও বাস্তববাদী ধর্ম। সেজন্যেই ইসলামের আবির্ভাবের ফলে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞানরাজ্যে নতুন এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অযৌক্তিক রীতি-আচার ও সংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে মানুষের মন ও চিন্তা স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছে। এটা ইসলামের অবদান। ইসলাম মানুষকে সত্য আবিষ্কারের দিকে আহ্বান জানিয়েছে। ইমাম আলী (আঃ)ও অন্ধ অনুসরণ, নাফরমানী, একগুঁয়েমিকে সত্যান্বেষী মনের পরিপন্থী বলে মনে করতেন এবং তাকে নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বরং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও চিন্তাশীলতার দিকে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন।

আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে প্রকৃত মুসলমান জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে কখনোই অসহিষ্ণু হয় না। তিনি আরো মনে করেন জ্ঞান অর্জনের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই কিংবা নেই কোনো স্থানিক পরিসীমা। তিনি বলেনঃ জ্ঞান হলো মুমিনের হারানো সম্পদ, সুতরাং কোনো কপট লোকের কাছ থেকে হলেও জ্ঞান আহরণ করো। সমৃদ্ধ ইসলামী সভ্যতা ও মুসলমানদের জ্ঞানের বিকাশ কেবল কোরআনের আলোকিত শিক্ষা এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর অনুপ্রেরণা থেকেই উৎসারিত। কেননা ইসলাম প্রতিটি মুসলিম নরনারীর ওপর জ্ঞানার্জন করাকে ফরয বলে ঘোষণা করেছে। আলী (আঃ) এরই ভিত্তিতে বহুবার বলেছেন যে প্রতিটি মানুষের মর্যাদা নির্ভর করছে তার জ্ঞানের পরিমান বা পরিধির ওপর।

ইমাম আলী (আঃ) নিজেকে এমন একজনের প্রতি বিনয়ী বলে মনে করেন যিনি তাঁকে অন্তত একটি শব্দও শিখিয়েছেন। তিনি নিজেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জাগৃতির জন্যে এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্যে জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে ভীষণ তাকিদ দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়ঃ যে-কোনো পাত্রেই কিছু ঢাললে তা পূর্ণ হয়ে যায় কেবল জ্ঞানের পাত্র ছাড়া,কেননা তাতে যতোই ঢালা হয়,তার পরিধি ততোই বেড়ে যায়। অবশ্য সেই জ্ঞান তখনি আলো ছড়ায় যখন তা মানুষকে নিজস্ব কামনা-বাসনা চরিতার্থ করা এবং স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্তি দেয়।

বহু জ্ঞানী লোক আছে যারা আত্ম-অহংকারের বেড়িতে আবদ্ধ হয়ে আছে এবং ধন-সম্পদ আর শক্তি-সামর্থ অর্জনের খেলায় মেতে রয়েছে। এ কারণেই মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন এবং জ্ঞানকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া সবসময়ই ছিল দ্বন্দ্বমুখর। আলী (আঃ) এর নাহজুল বালাগা জ্ঞানের জগতে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি মানুষকে শিক্ষার যথার্থ পথ দেখিয়েছে এবং সত্যিকারের জ্ঞানী যারা তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ইমাম আলী (আঃ) নবীজির আহলে বাইতকে জ্ঞানের প্রোজ্জল বাতি বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায়ঃ তাদের অর্থাৎ আহলে বাইতের কাছ থেকেই পরিত্রাণের উপায় সন্ধান করো,নবীজীর আহলে বাইতের কাছেই রয়েছে জ্ঞানের আসল রহস্য এবং অজ্ঞতার আঁধার দূর করার গোপন চাবিকাঠি।(সূত্র: ইন্টারনেট)