হযরত আলী (আ.) এর দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআন

সন্মানিত পাঠক! আজকে আমরা নাহজুল বালাগায় কোরআন বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। হাকিম নিশাবুরি থেকে বর্ণিত একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করবো আজকের আলোচনা। রাসূলে খোদা (সা) বলেছেন-আলী কোরআনের সাথে এবং কোরআন আলীর সাথে। কিয়ামত পর্যন্ত কোরআন এবং আলী একে অপরের কাছ থেকে কখনো পৃথক হবে না।

কোরআন হলো মানুষের জন্যে জীবনবিধান সংবলিত একটি ঐশী গ্রন্থ। ইহকাল এবং পরকালে মানবতার মুক্তির জন্যে পথনির্দেশক হিসেবে এই ঐশী গ্রন্থটিকে প্রেরণ করা হয়েছে। কোরআন তাই মূল পথের নীতি-আদর্শের নির্দেশনা দেয়। এই রেখা বা লাইনগুলো হলো এমন চেরাগের মতো যেই চেরাগের সাহায্যে চলার পথ দেখতে পাওয়া যায়। আর এই পথ দেখানোর ক্ষেত্রে আলী (আ) হলেন নবীজীর এর পাশাপাশি একজন গাইড।

আলী (আ) সেই ছোটোবেলা থেকেই নবীজীর সাহচর্যে ছিলেন। তিনি নবীজীর ওপর ওহী নাযিলের সাক্ষী। তিনি ছিলেন একাধারে কোরআনের হাফেজ, কোরআনের লেখক,কোরআনের ক্বারী এবং কোরআনের মুফাসসির। ওহীর পরিবেশে প্রতিপালিত হওয়া ছাড়াও নবীজীর জীবদ্দশায় এবং তাঁর পরবর্তীকালেও কোরআন প্রশিক্ষণ, কোরআন লেখা, কোরআন শেখানো ইত্যাদিতে তিনি তাঁর সময়ের একটা অংশ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। এ কারণেই নাহজুল বালাগার বিভিন্ন স্থানে কোরআনের বক্তব্য বা উদ্ধৃতি এসেছে। আলী (আ) তাঁর বক্তব্যের একটা অংশে কোরআনের বর্ণনা দিয়েছেন, কোরআনের গুরুত্ব,কোরআনের মর্যাদা এবং সমাজে তার ভূমিকা সম্পর্কেও বলেছেন,অপর অংশে কোরআনের পরিচয় এবং কোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন।

হযরত আলী (আ) কোরআনকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নত মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি ধর্মীয় গ্রন্থ বলে মনে করেন এবং তাঁর বক্তব্যে কোরআনের ব্যতিক্রমধর্মী ও অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের জন্যে পুনরায় উল্লেখিত হয়েছে। মানবীয় চিন্তার ওপরে কোরআনের শ্রেষ্ঠত্বকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইমাম আলী (আ) এর দৃষ্টিতে কোরআন নজিরবিহীন এবং অভিনব এক সংকলন যা সর্বজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এতে বাতিলের কোনো স্থান নেই এবং প্রাচীনত্বের কোনো আবরণ কোরআনের ওপর পড়ে না। তাকওয়ার ব্যাপারে জনগণকে উপদেশ দিতে গিয়ে তিনি আল্লাহর কিতাবকে তুলে ধরেছেন এভাবেঃআল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনকে নবীজীর ওপর নাযিল করেছেন। যে নূরের দীপ্তি কখনো নেভে না। এটি এমন এক চেরাগ যার ঔজ্জ্বল্য কখনো অস্তমিত হয় না। এটি এমন এক মহাসমুদ্র যার গভীরতা অনুভব করা যায় না। কোরআনের পথ এমন এক পথ যে পথে গোমরাহীর কোনো স্থান নেই। এটি এমন এক মশাল যার রশ্মিতে আঁধারের কোনো স্থান নেই। কোরআন হলো সত্য এবং মিথ্যাকে আলাদাকারী। কোরআনের যুক্তপ্রমাণ অকাট্য,তা পরাভূত হয় না। কোরআন এমন এক স্থাপত্য যার পিলারগুলো অক্ষয়-অনড়।

ইমাম আলী (আ) তাঁর বক্তব্যে কোরআনের বহু চিত্র এঁকেছেন এবং কোরআনকে তিনি বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে সত্য হলো নিরাময়, সম্মানের উৎস এবং মুক্তির পথপ্রদর্শক। তাঁর যে সাহিত্যিক প্রতিভা রয়েছে এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর সাহচর্যে থেকে তিনি যে জ্ঞান লাভ করেছেন সেসবকে তিনি কোরআন ব্যাখ্যার কাজে লাগিয়েছেন। কোরআন হচ্ছে ঈমান এবং তার মূল খনি,প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমুদ্র। কোরআন ন্যায়ের উৎস এবং ন্যায়নীতির বহমান ধারা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনকে জ্ঞানীদের তৃষ্ণা নিবারণকারী,গভীর চিন্তার অধিকারী অন্তরগুলোর জন্যে আনন্দদায়ক বসন্ত এবং পূণ্যবানদের তৎপরতার জন্যে একটি আলোকিত পথ হিসেবে স্থাপন করেছেন।

কোরআনের গভীর আধ্যাত্মিক প্রভাব রয়েছে যা আত্মার গভীরে প্রবেশ করে। কোরআনের আয়াতের মাঝে যে সঙ্গীত বা সুর লুকানো আছে,তা অন্তরে বিশেষ একটা শিল্পসুষমা দেয় যার ফলে অন্তরে প্রশান্তি আসে। এজন্যেই ইমাম আলী (আ) বলেছেনঃ এই কিতাব এমন এক ঔষধ যার প্রয়োগে কোনোরকম রোগের অস্তিত্ব থাকে না। এই কিতাব তাদের জন্যে সম্মান ও মর্যাদার উৎস যারা তাকে মনোনীত করে। যারা কোরআনের মাঝে ডুবে যায় তাদের জণ্যে কোরআন হচ্ছে নিরাপদ স্থান। কোরআন তাদের মুক্তিদাতা যারা কোরআন অনুযায়ী আমল করে।

হযরত আলী (আ) হলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাঁর সকল সম্মান ও মর্যাদা কোরআনের মাধ্যম বা ছায়াতেই অর্জিত হয়েছে। তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব জুড়েই রয়েছে কোরআনের কোরআনের বাণীর প্রভাব। এ কারণেই তিনি চেষ্টা করেছেন,মানুষকে হেদায়েতের এই উৎসটির সাথে পরিচয় করাতে।নাহজুল বালাগায় এসেছে তিনি বলেছেন কোরআন তোমাদের হাতের নাগালে রয়েছে। শিক্ষণীয় এবং উপদেশময় এই গ্রন্থটিকে তোমাদের কর্মসূচি প্রণয়নকারীরূপে গ্রহণ করো। তিনি আরো বলেছেন কোরআনের বর্ণনা থেকে অর্জন করে উপকৃত হও। কোরআনের উপদেশগুলো শোনো এবং সেগুলোকে গ্রহণ করো। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন,তিনি তোমাদের ওপর সকল আপত্তিকর পথকে বন্ধ করে দিয়েছেন এবং তাঁর হুজ্জাতকে তোমাদের ওপর সম্পন্ন করে দিয়েছেন।

আলী (আ) এর দৃষ্টিতে কোরআনের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ দুটি দিক রয়েছে। কোরআনের বাহ্যিক দিকটি আকর্ষণীয় এবং বিস্ময়কর। কিন্তু কোরআনের পরোক্ষ দিকটি এতোবেশি শেকড়ময় যে,মানুষ যতো গভীর চিন্তার অধিকারীই হোক না কেন,কোরআনের গভীরতা উপলব্ধি করার যোগ্য নয়। তবে যতো বেশি কোরআন নিয়ে চর্চা করবে ততো বেশি কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। সেজন্যেই ইমাম আলী (আ) সবাইকে কোরআন চর্চার দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। কোরআন চর্চাকে তিনি পরহেজগার এবং পুণ্যবানদের বৈশিষ্ট্যাবলির একটি বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন,যারা কোরআনের আত্মা থেকে দূরে তারা সবসময়ই মুখাপেক্ষী। মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্যে বা সমাজের সংকটগুলো দূর করার জন্যে কোরআনই যথেষ্ট। তো পাঠক! আসরের সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখানেই বিদায় নিতে হচ্ছে। আগামী আসরে আবারো কথা হবে। তখনো আপনাদেরকে মালঞ্চের সাথে পাবো-এ প্রত্যাশা রইলো। যারা সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।(সূত্র: ইন্টারনেট)